CWSA Set of 37 volumes
Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 of CWSA 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

Editions

ABOUT

All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.

Writings in Bengali and Sanskrit

Sri Aurobindo symbol
Sri Aurobindo

All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)

The Complete Works of Sri Aurobindo (CWSA) Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

বাংলা রচনা




“ধর্ম” পত্রিকার সম্পাদকীয়




সম্পাদকীয় – ১৬

ধৰ্ম্ম, ১৬শ সংখ্যা, ৫ই পৌষ, ১৩১৬

বেঙ্গলীর উক্তি

আমাদের সহযােগী “বেঙ্গলী” যুক্ত মহাসভা কমিটীর বিফল পরিণাম দেখিয়া আক্ষেপ করিয়া লিখিয়াছেন, জাতীয় পক্ষের প্রতিনিধি ক্রীডে সম্মত হইলেন না, ক্রীডে সহি না করিলে কেহ মহাসভায় প্রবেশ করিতে পারিবে না, অথচ এই আল্টিমেটম দিয়াও সহযােগী আশা করিতেছেন যে আবার মিলনের চেষ্টা হইতে পারে, আবার দুই দল যুক্ত হইয়া এক সঙ্গে দেশের কাৰ্য্যে প্রবৃত্ত হইতে পারে ৷ এই ভ্রান্ত ধারণা যতদিন মধ্যপন্থী নেতাদের মন হইতে বিদূরিত না হয়, ততদিন মিলনের আশা বৃথা ৷ যতদিন হারা এই জেদ ছাড়িতে নারাজ হইয়া থাকিবেন, ততদিন জাতীয় পক্ষ মিলনের আর কোনও চেষ্টায় যােগদান করিবেন না ৷ কেননা, তাহারা জানিবেন যে অপর পক্ষে প্রকৃত মিলনের ইচ্ছা নাই ৷ দেশকে বৃথা আশা দেখান অনুচিত ৷ জাতীয় পক্ষ অবিলম্বে তাঁহাদের বক্তব্য সৰ্ব্বসাধারণের জ্ঞাপনার্থে প্রকাশ করিবেন, তাহাতে তাহারা কি কি সৰ্ত্তে মধ্যপন্থীদিগের সহিত সন্ধিস্থাপন করিতে সম্মত, তাহা স্পষ্টভাবে নিরূপিত হইবে ৷ যে দিন মধ্যপন্থীগণ মেহতা ও মরলীর সকল রাজনীতিতে বিরক্ত হইয়া এই সৰ্ত্ত মানিয়া আমাদের নিকট সন্ধি-স্থাপনার্থে আসিবেন, সেই দিন আমরা আবার যুক্ত মহাসভা স্থাপনে সচেষ্ট হইব ৷


মজলিসের সভাপতি

মেহতার পদত্যাগে বঙ্গদেশীয় মধ্যপন্থীগণ এই প্রবল আশায় উৎফুল্ল হইয়াছিলেন যে, এইবার বুঝি সুরেনবাবুর পালা, এইবার বঙ্গদেশের মধ্যপন্থী নেতা কভেল্সনের সভাপতি হইবেন, বয়কট প্রস্তাব গৃহীত হইবে, বঙ্গদেশের জিত হইবে ৷ আশাই মধ্যপন্থীর সম্বল, সহিষ্ণুতা তাহাদের প্রধান গুণ! যাহারা সহস্রবার শ্বেতাঙ্গের আনন্দময় পদপ্রহার ভােগ করিয়া আবার প্রেম করিতে ছুটিয়া যান, সহস্রবার আশায় প্রতারিত হইয়া সগর্বে বলেন, আমরা এখনও নিরাশ নহি, তাহারা স্বেচ্ছাচারী স্বদেশবাসীর ঘন ঘন অপমানে লন্ধসংজ্ঞ হইবেন অথবা মেহতা মজলিসের বঙ্গবিদ্বেষে জর্জরিত হইয়াও শিখিবেন এবং আত্মসম্মান বজায় রাখিবার চেষ্টা করিবেন, এই আশা করা বৃথা ৷ মেহতার মজলিস কংগ্রেসও নহে, কনভেন্সনও নহে, যাঁহারা মেহতার সুরে গান করিবেন, মেহতার পদপল্লবে স্বাধীন মত ও আত্মসম্মান বিক্রয় করিবেন, তাহাদেরই জন্য এই মজলিস ৷ যাঁহারা এই মেহতা-পূজার “ক্রীড” স্বীকার না করিয়া প্রবেশ করিবেন, অনাহূত অতিথির ন্যায় তাহারা অপমানিত হইবেন এবং যদি অপমানেও বশ না হন, শেষে গলাধাক্কাও খাইয়া সেই সঙ্গ পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হইবেন ৷ তাহারা কি ভাবিয়াছেন যে পদত্যাগ করিয়াও মজলিসের কর্ণধার হাল ছাড়িয়াছেন? আমরা তখনই বুঝিতে পারিয়াছি, মদনমােহনই সভাপতি হইবেন ৷ মজলিসের পরমেশ্বর সেই আজ্ঞা দিয়াছেন, তঁাহার বােম্বাইবাসী আজ্ঞাবহমণ্ডলী দেশকে এই আজ্ঞা জানাইয়াছেন, অল ইণ্ডিয়া কংগ্রেস কমিটীও মাথা পাতিয়াছে ৷ বঙ্গদেশের অল্পজন প্রতিনিধি নিযুক্ত হইয়াছেন – কলিকাতায় ও ঢাকায়, কিন্তু অন্যত্র সাড়া শব্দ নাই ৷ কয়জন যাইবেন জানি না ৷ যাঁহারা যাইবেন, তাঁহারা ইহা জানিয়া যাইবেন, যে আমরা বৃটিশ ইণ্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশনের প্রতিনিধি হইয়া যাইতেছি ৷ তাহারা বঙ্গদেশের প্রতিনিধি নহেন ৷


বিলাতে রাষ্ট্রবিপ্লব

বিলাতে পুরাতন বৃটিশ রাজতন্ত্র লইয়া যে মহান সংঘর্ষ আরব্ধ হইয়াছে, তাহার পূর্বলক্ষণও উগ্র ও ভীতি-সঞ্চারক ৷ ইংলণ্ডের লােকমত কিরূপে উত্তেজিত ও ক্রুদ্ধ হইতেছে, তাহা রয়টরের সংবাদে দিন দিন প্রকাশ পাইতেছে ৷ অনেক দিন পরে সেই দেশে প্রকৃত রাজনীতিক উত্তেজনা ও দলে দলে বিদ্বেষ দেখা দিয়াছে ৷ প্রথম সাধারণতঃ যাহা হয় তাহা হইল, – উদারনীতিক মন্ত্রী মিঃ উরের বক্তৃতার সময়ে চীৎকার ও বিরােধকারীদের গণ্ডগােলের বাধা, পরে বলপ্রয়ােগে সভাভঙ্গের চেষ্টা ৷ রক্ষণশীল দলের বক্তাগণও বিশেষতঃ জমিদারবর্গ, প্রজার অসন্তোষে সেইরূপ বাধা পাইতে লাগিলেন, এখন মুখ্য মুখ্য মন্ত্রী ও বিখ্যাত বক্তা ভিন্ন কোনও রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ অবাধে স্বমত প্রকাশের অবসর পাইতেছেন না, অনেক সভায় একটা কথাও বলিতে দেওয়া হয় নাই ৷ কয়েক স্থানে সুরাট মহাসভার অভিনয় বিলাতে অভিনীত হইতেছে ৷ এখন দেখিতেছি ৷ বড় বড় রক্ষণশীল রাজনীতিবিদও বাধা পাইতেছেন ৷ আরও উগ্র লক্ষণ দেখা দিয়াছে, প্রাণহানির চেষ্টা ৷ উরের একটী সভায় সেই ঘরের কাচের দরজা একপ্রকার battering ram দ্বারা চূর্ণবিচূর্ণ হইয়াছে, অনেক লােক আহত হইয়াছেন ৷ আর একটী রক্ষণশীল সভায় বলে সভাভঙ্গ করা হইয়াছে, সেই দলের স্থানিক কর্মকর্তাকে নির্দয় প্রহারে অচেতন করা হইয়াছে, নিৰ্বাচনপ্রার্থী পলায়নপূর্বক বিপদের হাত হইতে রক্ষা পাইয়াছেন ৷ এই সকল লক্ষণ রাষ্ট্রবিপ্লবের, —দিন দিন যে উগ্র স্বরূপ ধারণ করিতেছে, সন্দেহ হয়, নির্বাচনের সময়ে রক্ষণশীল নিৰ্বাচকবর্গকে ভােট দিতে দেওয়া হইবে কি না ৷


গোখলের মুখদর্শন

গােখলে মহাশয়ের সূতিকা অশৌচ ঘুচিয়া গিয়াছে, আবার মুখ দেখাইয়াছেন, তাহার অমূল্য বাণীও শােনা গিয়াছে ৷ জাতীয় পক্ষের নৃসিংহ চিন্তামণি কেলকর দুষ্টা-সরস্বতীর আবেশে নব ব্যবস্থাপক সভায় নির্বাচনপ্রার্থী হইয়াছিলেন, বােম্বাইয়ের লাট কেলকরকে অযােগ্য ব্যক্তি বলিয়া তাহার নির্বাচন-লালসা নিষেধ করিয়াছেন, ইহাতে কেলকরকেও লজ্জা পরিত্যাগ করিয়া লাট সাহেবকে সাধিতে গিয়াছিলেন, লাট সাহেবও এই আবদারের উপযুক্ত উত্তর দিয়াছেন ৷ আমাদের গােপালকৃষ্ণ ভাবিলেন, বেশ হইয়াছে, গবর্ণমেণ্ট ইহাদিগকে কঠোর ও নির্দয়ভাবে নিগ্রহ করুক, আমি সেই অবসরে তাহাদের সহিত একটু প্রেম করি, আমার উপর লােকের যে ঘৃণা ও ক্রোধ হইয়াছে তাহা কমিয়া যাইতেও পারে ৷ অতএব তাহার “দক্ষিণ সভার অধিবেশনে গােখলে কেলকরের পক্ষ সমর্থন করিয়া তাহার বন্ধু ক্লার্ককে মধুর ভৎসনা শুনাইয়াছেন ৷ বলিয়াছেন, কেলকর অযােগ্য নহেন, যােগ্য ব্যক্তি, গােখলে তাহাকে যৌবনকাল হইতে চিনিতেছেন, উত্তম সিফারস দিতে পারেন, কেলকর রাজদ্রোহী নহেন, বিকৃতমস্তিষ্ক নহেন, লাট সাহেব আবার বিবেচনা করিলে ভাল হয় ৷


গোখলের সুসন্তান সমর্থন

গােখলে মহাশয় নিজের সংস্কাররূপ সন্তানের কথাও বলিয়াছেন ৷ বলিয়াছেন, আমার প্রিয়সন্তান খুব সুন্দর ছেলে, শান্ত শিষ্ট ছেলে, সমস্ত দেশের আদরের যােগ্য, তবে গবর্ণমেণ্ট তাহাকে যে রেগুলেশনরূপ বস্ত্র পরিধান করাইয়াছেন, তাহাতেই গােল, সােণারচঁাদের রূপ প্রকাশ পায় না ৷ ক্ষতি নাই, সােণারচঁাদকে আদর কর, পােষণ কর, বস্ত্র কদিন থাকিবে, শীঘ্র পরিপাটী বেশভূষা পরাইয়া তাহার নির্দোষ সৌন্দৰ্য সকলকে দেখাইব ৷ বােম্বাইয়ের লাটও এই উপদেশ দিয়াছেন, দেশ কি এতই অভদ্র ও রাজদ্রোহী হইয়াছে যে লাটের অনুরােধ অমান্য করিবে? গােখলের উপযুক্ত কথা বটে ৷


যুক্ত মহাসভা

আমরা দেশকে জানাইতে দুঃখিত হইলাম যে যুক্ত মহাসভা হইবার লেশমাত্র সম্ভাবনা নাই ৷ হুগলী প্রাদেশিক সভায় যে কমিটী নিযুক্ত হইয়াছিল, তাহার চেষ্টা বিফল হইয়াছে ৷ কমিটীর প্রথম অধিবেশনে মধ্যপন্থীদলের প্রতিনিধিগণ এই প্রস্তাব করিলেন যে গত বৎসরে অমৃতবাজার আফিসে যে তিনটী মুখ্য প্রস্তাব স্থির হইয়াছিল, সেইগুলি লইয়া আবশ্যকীয় পরিবর্তনপূর্বক আবার বােম্বাইবাসীর সহিত লেখালেখি চলুক ৷ এই তিনটী প্রস্তাব এইরূপ, - জাতীয় পক্ষ ক্রীড স্বীকার করিবে, জাতীয় পক্ষ কভেন্সনের নিয়মাবলী স্বীকার করিবে কিন্তু সেই নিয়মাবলী মহাসভায় গৃহীত হইবে, কলিকাতা অধিবেশনের চারি প্রস্তাব মহাসভায় গৃহীত হইবে ৷ সেইবার যাঁহারা মহারাষ্ট্রীয় জাতীয় পক্ষের প্রতিনিধি হইয়া আসিয়াছিলেন, তাহারা মহাসভাকে আবার বয়কট গ্রহণ করাইবার লালসায় ক্রীড ও কনষ্টিটিউশন স্বীকার করিতে সম্মত হইলেন ৷ কিন্তু ফেরােজশাহ মেহতা কিছুতেই কলিকাতা মহাসভার বয়কট প্রস্তাব গ্রহণ করিতে সম্মত হইলেন না ৷

এইবার মধ্যপন্থী প্রতিনিধিগণের এই প্রস্তাব ছিল যে যখন ফেরােজশাহ বয়কট গ্রহণে অসম্মত, তখন প্রস্তাব চতুষ্টয়ের কথা তােলা বৃথা, যুক্ত মহাসভার বিষয় নির্বাচন সমিতিতে আমরা বয়কটের জন্য চেষ্টা করিব, এখন চাপিয়া রাখি ৷ ক্রীড বিনা আপত্তিতে স্বীকার করিয়া সহি করিতে হইবে ৷ কনভেন্সনের নিয়মাবলীও মানিতে হইবে, তবে নিয়মাবলী সংশােধন করিবার জন্য লাহােরে একটী কমিটী নিযুক্ত হউক ৷ জাতীয়পক্ষের প্রতিনিধিগণ এই অদ্ভুত প্রস্তাবে সন্তুষ্ট হইতে পারেন নাই এবং শ্রীযুক্ত অরবিন্দ ঘােষ এই স্পষ্ট উত্তর দিলেন যে তিনি কখনও ক্রীডে সহি করিতে সম্মত হইবেন না, তবে যে প্রস্তাব করা হইয়াছে, কয়েকদিন বিবেচনা করিয়া ও নিয়মাবলী নিরীক্ষণ করিয়া এই প্রস্তাবের কি পরিবর্তন আবশ্যক, তাহা মধ্যপন্থীগণকে জানাইবেন ৷ স্থির হইল যে পূজার ছুটির পরে কমিটী আবার বসিয়া কোনও স্থির সিদ্ধান্ত করিবেন ৷ ছুটির পরে জাতীয়পক্ষের প্রতিনিধিগণ এই প্রস্তাব করিলেন যে তাঁহারা কনভেন্সনের উদ্দেশ্য মহাসভার উদ্দেশ্য বলিয়া স্বীকার করিবেন, কিন্তু নিজ মত বলিয়া কখন স্বীকার করিবেন না, সেই সঙ্কীর্ণ উদ্দেশ্যে কখন আবদ্ধ হইতে সম্মত হইবেন না এবং ক্রীডে কখন সহি করিবেন না; তাহারা কনভেন্সনের নিয়মাবলী মহাসভার কনষ্টিটিউশন বলিয়া স্বীকার করিবেন না, তবে মিলনের সুবিধার জন্য একটী বা দুইটী অধিবেশন সেই নিয়মের অধীনে করিতে সম্মত হইতে পারেন ৷ যে নিয়মে নূতন সভা-সমিতিদিগকে প্রতিনিধি নির্বাচনে অসমর্থ করা হইয়াছে, সেই নিয়ম রদ করিতে হইবে এবং যুক্ত মহাসভার দ্বিতীয় অধিবেশনে এই নিয়মাবলীর বদলে প্রকৃত কনষ্টিটিউশন মহাসভায় গ্রহণ করিতে হইবে ৷ তাহারা কলিকাতার প্রস্তাব চতুষ্টয় মিলনের সৰ্ত্ত বলিয়া গ্রহণ করাইবেন না, কিন্তু মধ্যপন্থী নেতাদের নিকট এই প্রতিজ্ঞা চান যে বিষয় নির্বাচন সমিতিতে বা মহাসভায় এই চারি প্রস্তাবের কথা উত্থাপন করিবার পূর্ণ অবসর দেওয়া হইবে ৷ দ্বিতীয়বার যখন কমিটী মিলিত হইল, মধ্যপন্থী নেতাগণ এই প্রস্তাব গ্রহণে সম্মত হইলেন না, তাহারা বলিলেন ক্রীডে সহি করিতেই হইবে, নচেৎ মিলনের চেষ্টা বৃথা ৷ ক্রীড ও নিয়মাবলী মানিয়া আমাদের সহিত লাহােরে চল, সেইখানে নিয়মাবলী সংশােধনের কমিটী নিযুক্ত করিবার জন্য জেদ করিব ৷ জাতীয়পক্ষের প্রতিনিধিগণ ক্রীডে সহি করিতে অস্বীকৃত হইলেন ৷ যুক্ত মহাসভা হইল না ৷

আমরা বারংবার বলিয়াছি, বঙ্গদেশের জাতীয় পক্ষ কখনও মেহতা মজলিসকে মহাসভা বলিয়া স্বীকার করিবে না, সেই মজলিসে ঢকিবার জন্য লালায়িত নহে, ক্রীডে সহি করিতে কোনও কালে রাজী হইবে না ৷ মধ্যপন্থী নেতাগণের প্রস্তাবের অর্থ এই যে জাতীয় পক্ষ দোষ স্বীকার করিয়া নিজ মত ও সত্যপ্রিয়তাকে জলাঞ্জলি দিয়া, মেহতা গােখলের নিকট জোড়হাত করিয়া সাষ্টাঙ্গ নমস্কার করিতে করিতে মজলিসে ঢুকিবে, সেইখানে অল্পসংখ্যক জাতীয় পক্ষের প্রতিনিধি বহু-সংখ্যক মধ্যপন্থীদের অনুগ্রহ ভিক্ষা করিবেন ৷ কেন যে জাতীয় পক্ষ এত হীনতা ও আত্মাবমাননা প্রকাশ করিবেন, তাহা আমরা বুঝি না ৷ মধ্যপন্থীগণ কি ইহাই স্থির করিয়াছেন যে জাতীয় পক্ষ দুই বৎসরের কঠিন ও নির্দয় নিগ্রহে ভীত হইয়া মেহতা মজলিসের শরণ লইবার উন্মত্ত বাসনায় মিলনাকাঙ্ক্ষী হইলেন? যখন দুই পরস্পরবিরােধী পক্ষ রহিয়াছে, ইহা কি কখন সম্ভব যে এক পক্ষ বিপক্ষের সমস্ত আবদার সহ্য করিয়া নিজের সমস্ত মত আপত্তি ও উচ্চ আশাকে ভুলিয়া বিপক্ষের পদানত হইবে? গত বৎসরে অমৃতবাজার আফিসে যে প্রস্তাব করা হইয়াছিল – সেই প্রস্তাবে বঙ্গদেশীয় জাতীয় পক্ষ সম্মত ছিলেন না – তাহাতেও শ্ৰীযুক্ত মতিলাল ঘােষ কলিকাতার প্রস্তাবচতুষ্টয় রক্ষা করিয়াছিলেন, এইবার তাহাও মধ্যপন্থীগণের প্রস্তাবে রক্ষিত ছিল না ৷ জাতীয় পক্ষের একটী কথাও থাকিবে না, মধ্যপন্থীদের কথা পূর্ণমাত্রায় স্বীকার করিতে হইবে, ইহাই এই অদ্ভুত সন্ধির ভিত্তি ৷

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন মহাসভার দাবি বলিয়া কলিকাতায় স্থির হইয়াছিল ৷ যদিও ইহাতে আমাদের মত ছিল না, তথাপি অধিকাংশ প্রতিনিধির মত বলিয়া আমরা ইহাই মানিয়া লইলাম ৷ সুরাটে আবার কভেন্সনে স্থির হয় যে যাঁহারা এই আদর্শ রাজনীতিক শেষ উদ্দেশ্য বলিয়া স্বীকার করিতে রাজী নন, তাহারা প্রবেশ করিতে পারিবেন না ৷ ক্রীডে সহি করা এবং এই তত্ত্বে মত দেওয়া একই কথা ৷ প্রথমতঃ, আমাদের যাহাতে মত নাই, তাহাতে আমরা সহি ৷ করিব কেন? ধৰ্ম্ম আমাদের একমাত্র সহায়, সেই ধর্মকে জলাঞ্জলি দিয়া মেহতার মনস্তুষ্টির জন্য ভগবানের অসন্তোষ অর্জন করিব কেন? দ্বিতীয় কথা, যদি বল, মহাসভার দাবি মহাসভার উদ্দেশ্যে পরিণত হইয়াছে, আর কোনও পরিবর্তন ৷ করা হয় নাই, স্বীকার করিবে না কেন? তাহাতেও মিলনের আশায় রাজী হইতে পারি, কিন্তু ক্রীডে সহি করিব না ৷ ভারতের মহাসভা, মধ্যপন্থীরও নহে, জাতীয় পক্ষেরও নহে, ভারতবাসী যাহাকে প্রতিনিধি বলিয়া নির্বাচন করিবেন, তাহাকে প্রতিনিধি বলিয়া গ্রহণ করিতেই হইবে, নচেৎ তােমরা মহাসভা নহ, মধ্যপন্থীর পরামর্শ সভা মাত্র ৷ ভারতের মহাসভা, মধ্যপন্থীর নহে, ভীরুরও নহে ৷ ক্রীডে সহি করানাের অর্থ এই যে ভারতের স্বাধীনতাপ্রয়াসী স্বার্থত্যাগী সাহসী মায়ের সন্তান ভারতের মহাসভায় প্রবেশ করিবার অযােগ্য ৷ ক্রীডে সহি করায় জাতীয় আদর্শের অপমান, জাতীর অপমান, জাতীয়তার অপমান, মাতৃভক্ত নিগৃহীত ভারতসন্তানদের অপমান করা হইবে ৷

তােমাদের নিয়মাবলী স্বেচ্ছাচার ও প্রজাতন্ত্রের নিয়মভঙ্গের স্মৃতিচিহ্ন ৷ কখন মহাসভায় গৃহীত হয় নাই, অথচ কয়েকজন বড় লােকের ইচ্ছায় মহাসভা সেই নিয়মাবলীতে বদ্ধ করিবার চেষ্টা ৷ আমরা যদি তাহাকে কনষ্টিটিউশন বলিয়া মানি, তাহা হইলে তােমাদের সেই দেশের অহিতকর চেষ্টা সফল হইল ৷ তথাপি যদি দুই বৎসরের মধ্যে মহাসভায় প্রকৃত নিয়মাবলী লিপিবদ্ধ করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও, আমরা কনভেন্সনের বর্তমান নিয়মাবলী অস্থায়ী ব্যবস্থা বলিয়া স্বীকার করিতে সম্মত ৷ কেবল এক নিয়ম উঠাইয়া দিতে হইবে যাহাতে জাতীয় পক্ষের প্রতিনিধির প্রবেশ কাৰ্যতঃ নিষিদ্ধ হয় ৷ এই নিয়ম না উঠাইলে বহুসংখ্যক মধ্যপন্থীর দলে মুষ্টিমেয় জাতীয় পক্ষের প্রতিনিধি কি করিতে যাইবেন? ইংরাজদের শাসন সংস্কারে এইরূপ নিয়ম করা হইয়াছে বলিয়া তােমরা বিলাপে ও প্রতিবাদে দিমণ্ডল বিধ্বনিত কর; রাজপুরুষগণ আমাদিগকে বয়কট করিয়াছেন বলিয়া নিৰ্বাচনপ্রার্থী হইতে অসম্মত হও ৷ তােমাদেরও এই অন্যায় নিয়ম-সংস্কারের উদ্দেশ্য আমাদিগকে মহাসভা হইতে বহিষ্কার করা ৷ এই নিয়ম যতদিন থাকে, আমরা কেন তােমাদের ব্যবস্থাপক সভায় বসিতে যাইব? এই নিয়ম উঠাইতে যদি অসম্মত হও, আমরা বুঝিব যে আমাদের সহিত মিলিত হইবার কথা মিথ্যা, শুদ্ধ নিজের কোন সাময়িক স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমাদের অল্পসংখ্যক লােককে প্রবেশ করিতে আহ্বান করিতেছ ৷

জাতীয় পক্ষের প্রতিনিধিগণের প্রস্তাব ন্যায়সঙ্গত ও মিলনেচ্ছায় পরিপূর্ণ ৷ তঁাহারা মহাসভার উদ্দেশ্য ও কভেন্সনের নিয়মাবলী যতদূর পারা যায়, ততদূর মানিয়া লইয়াছেন, নিজের মতের স্বাধীনতা, সত্যের মর্যাদা, দেশের হিতের জন্য ৷ যাহা রক্ষণীয়, তাহা রক্ষা করিয়াছেন, তাহাতে মধ্যপন্থীদের কোনও প্রকৃত অসুবিধা হইবে না, রাজপুরুষগণও মহাসভাকে রাজদ্রোহীদের সম্মিলনী বলিতে পারিবেন না,মহাসভার কাৰ্য্যেও কোন গােল হইবার সম্ভাবনা নাই ৷ আদান-প্রদান সন্ধির নিয়ম ৷ এক পক্ষে কেবলই আদান, অপরপক্ষে কেবলই প্রদান, এই নিয়ম কোন দেশের! বা এই নিয়মে কবে প্রকৃত মিল হইয়াছে ৷ যদি আমরা যুদ্ধে পরাজিত, সন্ধিভিক্ষা প্রার্থী হইতাম, তাহা হইলে মধ্যপন্থীদের আবদার বঝিতাম; আমরা পরাজিত নহি, ভিক্ষাপ্রার্থীও নহি ৷ দেশের হিতের জন্য, দেশবাসীর বাসনা বলিয়া যুক্ত মহাসভা করিবার চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইয়াছিলাম – নচেৎ আমাদের বল আছে, তেজ আছে, সাহস আছে, ভবিষ্যৎ আমাদের পক্ষে, দেশবাসী আমাদের পক্ষে, যুবকমণ্ডলী আমাদেরই, আমরা স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়াইতে সর্বদা প্রস্তুত ৷









Let us co-create the website.

Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.

Image Description
Connect for updates