CWSA Set of 37 volumes
Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 of CWSA 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

Editions

ABOUT

All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.

Writings in Bengali and Sanskrit

Sri Aurobindo symbol
Sri Aurobindo

All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)

The Complete Works of Sri Aurobindo (CWSA) Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

বাংলা রচনা




বিবিধ রচনা




জগন্নাথের রথ

আদর্শ সমাজ মনুষ্য-সমষ্টির অন্তরাত্মা ভগবানের বাহন, জগন্নাথের যাত্রার রথ ৷ ঐক্য স্বাধীনতা জ্ঞান শক্তি সেই রথের চারি চক্র ৷

মনুষ্যবুদ্ধির গঠিত কিম্বা প্রকৃতির অশুদ্ধ প্রাণস্পন্দনের খেলায় সৃষ্ট যে সমাজ, তাহা অন্য প্রকার ৷ এটী সমষ্টির নিয়ন্তা ভগবানের রথ নহে, মুক্ত অন্তর্যামীকে আচ্ছাদিত করিয়া যে বহুরূপী দেবতা ভগবৎ-প্রেরণাকে বিকৃত করে, ইহা সমষ্টিগত সেই অহঙ্কারের বাহন ৷ এটী চলিতেছে নানা ভােগপূর্ণ লক্ষ্যহীন কৰ্ম্মপথে, বুদ্ধির অসিদ্ধ অপূর্ণ সঙ্কল্পের টানে, নিম্নপ্রকৃতির পুরাতন বা নূতন অবশ প্রেরণায় ৷ যতদিন অহঙ্কারই কৰ্ত্তা, ততদিন প্রকৃত লক্ষ্যের সন্ধান পাওয়া অসম্ভব, – লক্ষ্য জানা গেলেও সেদিকে সােজা রথ চালানাে অসাধ্য ৷ অহঙ্কার যে ভাগবত পূর্ণতার প্রধান বাধা, এই তথ্য যেমন ব্যষ্টির, তেমনই সমষ্টির পক্ষেও সত্য ৷

সাধারণ মনুষ্যসমাজের তিনটী মুখ্য ভেদ লক্ষ্য করা যায় ৷ প্রথমটী নিপুণ কারিগরের সৃষ্টি, সুঠাম চাকচিক্যময় উজ্জ্বল অমল সুখকর, তাহাকে বহিয়া লইয়াছে ৷ বলবান্ সুশিক্ষিত অশ্ব, সে অগ্রসর হইতেছে সুপথে সযত্নে ত্বরারহিত অমন্থর গতিতে ৷ সাত্ত্বিক অহঙ্কার ইহার মালিক আরােহী ৷ যে উপরিস্থ উত্তুঙ্গ প্রদেশে ভগবানের মন্দির, রথ তাহারই চারিদিকে ঘুরিতেছে, কিন্তু কিছু দূরে দূরে রহিয়া, সেই উচ্চভূমির খুব নিকটে সে পৌঁছিতে পারে না ৷ যদি উঠিতে হয় রথ হইতে নামিয়া একা পদব্রজে উঠাই নিয়ম ৷ বৈদিক যুগের পরে প্রাচীন আর্যদের সমাজকে এই ধরণের রথ বলা যায় ৷

দ্বিতীয়টী বিলাসী কৰ্ম্মঠের মােটরগাড়ী ৷ ধূলার ঝড়ের মধ্যে ভীমবেগে বজ্র-নির্ঘোষে রাজপথ চূর্ণ করিয়া অশান্ত অশ্রান্ত গতিতে সে ধাইয়াছে, ভেরীর রবে শ্রবণ বধির, যাহাকে সম্মুখে পায় দলিয়া পিষিয়া চলিয়া যায় ৷ যাত্রীর প্রাণের সঙ্কট, দুর্ঘটনা অবিরল, রথ ভাঙ্গিয়া যায়, আবার কষ্টেসৃষ্টে মেরামতের পর সদর্প চলন ৷ নির্দিষ্ট লক্ষ্য নাই, তবে যে নূতন দৃশ্য অনতিদূরে চোখের সম্মুখে পড়ে, “এই লক্ষ্য, এই লক্ষ্য চীৎকার করিয়া করিয়া রথের মালিক রাজসিক অহঙ্কার সেই দিকে ছুটে ৷ এই রথে চলায় যথেষ্ট ভােগ সুখ আছে, বিপদও অনিবাৰ্য্য, ভগবানের নিকট পৌঁছা অসম্ভব ৷ আধুনিক পাশ্চাত্যসমাজ এই ধরণেরই মােটরগাড়ী ৷

তৃতীয়টী মলিন পুরান কচ্ছপগতি আধভাঙ্গা গরুরগাড়ী, টানে কৃশ অনশনক্লিষ্ট আধমরা বলদ, চলিতেছে সঙ্কীর্ণ গ্রাম্যপথে; একজন ময়লা-কাপড়পরা ভূঁড়ি-সৰ্বস্ব শ্লথ অন্ধ বৃদ্ধ ভিতরে বসিয়া মহাসুখে কাদামাখা হুকা টানিতে টানিতে গাড়ীর কর্কশ ঘ্যান ঘ্যান্ শব্দ শুনিতে শুনিতে অতীতের কত বিকৃত আধ আধ স্মৃতিতে মগ্ন ৷ এই মালিকের নাম তামসিক অহঙ্কার ৷ গাড়ােয়ানের নাম পুঁথি-পড়া জ্ঞান, সে পঞ্জিকা দেখিতে দেখিতে গমনের সময় ও দিক নির্দেশ করে, মুখে এই বুলি “যাহা আছে বা ছিল, তাহাই ভাল, যাহা হইবার চেষ্টা তাহাই খারাপ ৷” এই রথে ভগবানের নিকট না হৌক শূন্য ব্রহ্মে পৌঁছিবার বেশ আশু সম্ভাবনা আছে ৷

তামসিক অহঙ্কারের গরুরগাড়ী যতক্ষণ গ্রামের কাচাপথে চলে, ততক্ষণ রক্ষা ৷ যেদিন জগতের রাজপথে সে উঠিয়া আসিবে যেখানে ভূরি ভূরি বেগদৃপ্ত মােটরের ছুটাছুটি, তখন তাহার কি পরিণাম হইবে, সে কথা ভাবিতেই প্রাণ শিহরিয়া উঠে ৷ বিপদ এই যে রথ বদলানাের সময় চেনা বা স্বীকার করা তামসিক অহঙ্কারের জ্ঞান-শক্তিতে কুলায় না ৷ চিনিবার প্রবৃত্তিও নাই, তাহা হইলে তাহার ব্যবসা ও মালিকত্ব মাটী ৷ সমস্যা যখন উপস্থিত, যাত্রীদের মধ্যে কেহ কেহ বলে, “না থাক, ইহাই ভাল, কেননা ইহা আমাদেরই” – তাহারা গোঁড়া অথবা ভাবুক দেশভক্ত ৷ কেহ কেহ বলে, “এদিকে ওদিকে মেরামত করিয়া লও না” – এই সহজ উপায়ে নাকি গরুর গাড়ী অমনি অনিন্দ্য অমূল্য মােটরে পরিণত হইবে; – ইহাদের নাম সংস্কারক ৷ কেহ কেহ বলে, “পুরাতন কালের সুন্দর রথটী ফিরিয়া আসক” – তাহারা সেই অসাধ্যসাধনের উপায়ও খুঁজিতে মাঝে মাঝে প্রয়াসী ৷ আশার অনুরূপ ফল যে হইবে, তাহার বিশেষ কোন লক্ষণ কোথাও কিন্তু নাই ৷

তিনটীর মধ্যেই যদি পছন্দ করা অনিবার্য হয়, আরও উচ্চতর চেষ্টা যদি আমরা পরিহার করি, তবে সাত্ত্বিক অহঙ্কারের মূল রথ নির্মাণ করা যুক্তিযুক্ত ৷ কিন্তু জগন্নাথের রথ যতদিন সৃষ্টি না হয়, আদর্শ সমাজও ততদিন গঠিত হইবে না ৷ সেইটাই আদর্শ, সেইটাই চরম, গভীরতম উচ্চতম সত্যের বিকাশ ও প্রতিকৃতি ৷ মনুষ্যজাতি গুপ্ত বিশ্বপুরুষের প্রেরণায় তাহাকেই গড়িতে সচেষ্ট, কিন্তু প্রকৃতির অজ্ঞানবশে গড়িয়া বসে অন্যরূপ প্রতিমা – হয় বিকৃত অসিদ্ধ কুৎসিত, নয় চলনসই অর্ধসুন্দর বা সৌন্দৰ্য্য সত্ত্বেও অসম্পূর্ণ; শিবের বদলে হয় বামন, নয় রাক্ষস, নয় মধ্যম লােকের অর্ধদেবতা ৷

জগন্নাথের রথের প্রকৃত আকৃতি বা নমুনা কেহ জানে না, কোন জীবনশিল্পী আঁকিতে পারগ নন ৷ সেই ছবি বিশ্বপুরুষের হৃদয়ে প্রস্তুত, নানা আবরণে আবৃত ৷ দ্রষ্টা কর্তা অনেক ভগবদ্‌বিভূতির অনেক চেষ্টায় আস্তে আস্তে বাহির করিয়া স্থল জগতে প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্যামীর অভিসন্ধি ৷

জগন্নাথের এই রথের আসল নাম সমাজ নয়, সংঘ ৷ বহুমুখী শিথিল জনসংঘ বা জনতা নয়; আত্মজ্ঞানের, ভাগবতজ্ঞানের ঐক্যমুখী শক্তির বলে সানন্দে গঠিত বন্ধনরহিত অচ্ছেদ্য সংহতি, ভাগবত সংঘ ৷

অনেক সমবেত মনুষ্যের একত্র কৰ্ম্ম করিবার উপায় যে সংহতি, তাহাই সমাজ নামে খ্যাত ৷ শব্দের উৎপত্তি বুঝিয়া অর্থও বােঝা যায় ৷ সম্ প্রত্যয়ের অর্থ একত্র, অজ ধাতুর অর্থ গমন ধাবন যুদ্ধ ৷ সহস্র সহস্র মানব কৰ্ম্মার্থে ও কামাৰ্থে সমবেত, এক ক্ষেত্রে নানা লক্ষ্যের দিকে ধাবিত, কে আগে যায় কে বড় হয়, তাহা লইয়া ধ্বস্তাধ্বস্তি – competition – যেমন অন্য সমাজের সঙ্গে তেমন পরস্পরের সঙ্গেও যুদ্ধ ও ঝগড়াঝাটি – এই কোলাহলের মধ্যেই শৃঙ্খলার জন্য, সাহায্যের জন্য, মনােবৃত্তির চরিতার্থতার জন্য নানা সম্বন্ধ স্থাপন, নানা আদর্শের প্রতিষ্ঠা, ফলে কষ্টসিদ্ধ অসম্পূর্ণ অস্থায়ী কিছু, ইহাই সমাজের, প্রাকৃত সংসারের চেহারা ৷

ভেদকে ভিত্তি করিয়া প্রাকৃত সমাজ ৷ সেই ভেদের উপর আংশিক অনিশ্চিত ও অস্থায়ী ঐক্য নির্মিত ৷ আদর্শ সমাজের গড়ন ঠিক ইহার বিপরীত ৷ ঐক্য ভিত্তি, আনন্দ-বৈচিত্র্যের জন্য – ভেদের নয় – পার্থক্যের খেলা ৷ সমাজে পাই শারীরিক, মানসকল্পিত ও কৰ্ম্মর্গত ঐক্যের আভাস, আত্মগত ঐক্য সংঘের প্রাণ ৷

আংশিকভাবে সংকীর্ণক্ষেত্রে সংঘস্থাপনের নিষ্ফল চেষ্টা কতবার হইয়াছে, হয় তাহা বুদ্ধিগত চিন্তার প্রেরণায় – যেমন পাশ্চাত্যদেশে, নয় নির্বাণােন্মুখ কর্মবিরতির স্বচ্ছন্দ অনুশীলনার্থে – যেমন বৌদ্ধদের, নয় বা ভাগবত ভাবের আবেগে – যেমন প্রথম খৃষ্টীয় সংঘ ৷ কিন্তু অল্পের মধ্যেই সমাজের যত দোষ অসম্পূর্ণতা প্রবৃত্তি ঢুকিয়া সংঘকে সমাজে পরিণত করে ৷ চঞ্চল বুদ্ধির চিন্তা টেকে না, পুরাতন বা নূতন প্রাণ-প্রবৃত্তির অদম্য স্রোতে ভাসিয়া যায় ৷ ভাবের আবেগে এই চেষ্টার সাফল্য অসম্ভব, ভাব নিজের খরতায় পরিশ্রান্ত হইয়া পড়ে ৷ নির্বাণকে একাকী খোঁজা ভাল, নিৰ্বাণ-প্রিয়তায় সংঘসৃষ্টি একটা বিপরীত কাণ্ড ৷ সংঘ স্বভাবতঃ কৰ্ম্মের সম্বন্ধের লীলাভূমি ৷

যেদিন জ্ঞান কৰ্ম্ম ও ভাবের সামঞ্জস্যে ও একীকরণে আত্মগত ঐক্য দেখা দিবে, সমষ্টিগত বিরাটপুরুষের ইচ্ছাশক্তির প্রেরণায়, সেদিন জগন্নাথের রথ জগতের রাস্তায় বাহির হইয়া দশ দিক আলােকিত করিবে ৷ সত্যযুগ নামিবে পৃথিবীর বক্ষে, মৰ্ত্ত মানুষের পৃথিবী হইবে দেবতার খেলার শিবির, ভগবানের মন্দির-নগরী, temple city of God – আনন্দপুরী ৷









Let us co-create the website.

Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.

Image Description
Connect for updates