CWSA Set of 37 volumes
Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 of CWSA 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

Editions

ABOUT

All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.

Writings in Bengali and Sanskrit

Sri Aurobindo symbol
Sri Aurobindo

All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)

The Complete Works of Sri Aurobindo (CWSA) Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

বাংলা রচনা




বেদ ও উপনিষদ




বেদরহস্য

বেদসংহিতা ভারতবর্ষের ধর্ম সভ্যতা ও অধ্যাত্মজ্ঞানের সনাতন উৎস ৷ কিন্তু এই উৎসের মূল অগম্য পৰ্ব্বতের গুহায় নিলীন, তাহার প্রথম স্রোতও অতি প্রাচীন ঘন কণ্টককময় অরণ্যে পুস্পিত বৃক্ষলতাগুল্মের বিচিত্র [আবরণে]1আবৃত ৷ বেদ রহস্যময় ৷ ভাষা, কথার ভঙ্গী, চিন্তার গতি অন্য যুগের সৃষ্টি, অন্য ধরনের মনুষ্যবুদ্ধিসম্ভুত ৷ এক পক্ষে অতি সরল, যেন নিৰ্ম্মল সবেগ পৰ্বতনদীর প্রবাহ, অথচ এই চিন্তাপ্রণালী আমাদের এমনই জটিল বােধ হয়, এই ভাষার অর্থ এমনই সন্দিগ্ধ যে মূল চিন্তা ও ছত্রে ছত্রে ব্যবহৃত সামান্য কথাও লইয়া প্রাচীনকাল হইতে তর্ক ও মতভেদ চলিয়া আসিতেছে ৷ পরম পণ্ডিত সায়ণাচার্য্যের টীকা পড়িয়া মনে এই ধারণা উৎপন্ন হয় যে, হয় বেদের কখনই কোনও সংলগ্ন অর্থ ছিল না, নয় যাহা ছিল তাহা বেদের পরবর্তী ব্রাহ্মণরচনার অনেক আগে সর্বগ্রাসী কালের অতল বিস্মৃতিসাগরে নিমগ্ন হইয়াছিল ৷

সায়ণ বেদের অর্থ করিতে গিয়া মহা বিভ্রাটে পড়িয়াছেন ৷ যেন এই ঘাের অন্ধকারে মিথ্যা আলােকের পিছনে দৌড়াইয়া বার বার আছাড় খায়, গর্তে পঙ্কে ময়লা জলে পড়ে, হয়রাণ হইয়া যায়, অথচ ছাড়িতেও পারে না ৷ আৰ্য্যধর্মের আসল পুস্তক, অর্থ করিতেই হয়, কিন্তু এমন হেঁয়ালির কথা, এমন রহস্যময় নানা নিগুঢ় চিন্তায় জড়িত সংশ্লেষণ যে সহস্র স্থলে অর্থই করা হয় না, যেখানে কোনও রকমেই অর্থ হয়, সেখানেও প্রায়ই সন্দেহের ছায়া আসিয়া পড়ে ৷ এই সঙ্কটে অনেকবার সায়ণ নিরাশ হইয়া ঋষিদের মুখে এমন ব্যাকরণের বিরােধী ভাষা, এমন কুটিল জড়িত ভগ্ন বাক্যরচনা, এমন বিক্ষিপ্ত অসংলগ্ন চিন্তা আরােপ করিয়াছেন যে তাহার টীকা পড়িয়া এই ভাষা ও চিন্তাকে আৰ্য্য না বলিয়া বৰ্ব্বরের বা উন্মত্তের প্রলাপ বলিতে প্রবৃত্তি হয় ৷ সায়ণের দোষ নাই ৷ প্রাচীন নিরুক্তকার যাস্কও তদ্রুপ বিভ্রাটে বিভ্রাট করিয়াছেন আর যাঙ্কের অনেক পূর্ববর্তী ব্রাহ্মণকারও বেদের সরল অর্থ না পাইয়া কল্পনার সাহায্যে mythopoeic facultyর আশ্রয়ে দুরূহ ঋকগুলির ব্যাখ্যা করিবার বিফল চেষ্টা করিয়াছেন ৷

ঐতিহাসিকেরা এই প্রণালী অনুসরণ করিয়া নানান কল্পিত ইতিহাসের আড়ম্বরে বেদের সুকৃত সরল অর্থ বিকৃত ও জটিল করিয়া ফেলিয়াছেন ৷ একটী উদাহরণে এই অর্থবিকৃতির ধরণ ও মাত্রা বােঝা যাইবে ৷ পঞ্চম মণ্ডলের দ্বিতীয় সূক্তে অগ্নির নিষ্পেষিত বা ছাপান অবস্থা আর অতিবিলম্বে তাহার বৃহৎ প্রকাশের কথা আছে ৷ “কুমারং মাতা যুবতিঃ সমুব্ধং গুহা বিভৰ্ত্তি ন দদাতি পিত্রে ৷ ..কমেতং ত্বং যুবতে কুমারং পেষী বিভর্ষি মহিষী জজান ৷ পূৰ্ব্বীহি গর্ভঃ শরদো ববন্ধ অপশ্যং জাতং যদসূত মাতা ৷” ইহার অর্থ, “যুবতী মাতা কুমারকে ছাপান রাখিয়া গুহায় অর্থাৎ গুপ্ত স্থানে নিজ জঠরে বহন করেন, পিতাকে দিতে চান না ৷ হে যুবতী, এই কুমার কে, যাহাকে তুমি সম্পিষ্ট হইয়া অর্থাৎ তােমার সঙ্কুচিত অবস্থায় নিজের ভিতরে বহন কর? মাতা যখন সঙ্কুচিত অবস্থা ছাড়িয়া মহতী হন, তখন কুমারকে জন্ম দেন ৷ অনেক বৎসর ধরিয়া গর্ভস্থ শিশু বৃদ্ধি পাইয়াছে, যখন মাতা তাহাকে প্রসব করিলেন, তখন তাহাকে দেখিতে পাইলাম ৷” বেদের ভাষা সৰ্ব্বত্রই একটু ঘন, সংহত, সারবান, অল্প কথায় বিস্তর অর্থ প্রকট করিতে চায়, ইহা সত্ত্বেও অর্থের সরলতা, চিন্তার সামঞ্জস্যের হানি হয় না ৷ ঐতিহাসিকেরা সূক্তের এই সরল অর্থ বুঝিতে পারেন নাই, যখন মাতা পেষী, তখন “কুমারং সমুব্ধং”, মাতার সস্পিষ্ট অর্থাৎ সঙ্কুচিত অবস্থায় কুমারেরও নিস্পিষ্ট অর্থাৎ ছাপান ৷ অবস্থা হয়, ঋষির ভাষা ও চিন্তার এই সামঞ্জস্য লক্ষ্য কিম্বা হৃদয়ঙ্গম করিতে পারেন নাই ৷ তাহারা পেষী দেখিয়া পিশাচী বুঝিলেন, ভাবিলেন কোনও পিশাচী অগ্নির তেজ হরণ করিয়াছে, মহিষী দেখিয়া রাজার মহিষী বুঝিলেন, কুমারং সমুব্ধং দেখিয়া কোনও ব্রাহ্মণকুমার রথের চাকায় নিষ্পেষিত হইয়া মরিয়াছে ইহাই বুঝিলেন ৷ এই অর্থে বেশ একটা লম্বা আখ্যায়িকাও সৃষ্টি হইল ৷ ফলে সােজা ঋকের অর্থ দুরূহ হইয়া গেল, কুমার কে, জননী কে, পিশাচী কে, অগ্নির ব্রাহ্মণকুমারের গল্প হইতেছে, কে কাহাকে কি বিষয়ে কথা বলিতেছে, সব গণ্ডগােল ৷ সর্বত্রই এইরূপ অত্যাচার, অযথা কল্পনার দৌরাত্ম্যে বেদের প্রাঞ্জল অথচ গভীর অর্থ বিকৃত বিকলাঙ্গ হইয়া পড়িয়াছে, অন্যত্র যেখানে ভাষা ও চিন্তা একটু জটিল, টীকাকারের কৃপায় দুর্বোধ্যের দুর্বোধ্যতা ভীষণ অস্পৃশ্য মূর্তি ধারণ করিয়াছে ৷

স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র ঋক বা উপমা কেন, বেদের আসল মৰ্ম্ম লইয়া অতি প্রাচীনকালেও বিস্তর মতভেদ ছিল ৷ গ্রীসদেশীয় যুহেমেরের মতে গ্রীকজাতির দেবতারা চিরস্মরণীয় বীর ও রাজা ছিল, কালে অন্যপ্রকার কুসংস্কারে ও কবির উদ্দাম কল্পনায় দেবতা বানাইয়া স্বর্গে সিংহাসনারূঢ় করা হইয়াছে ৷ প্রাচীন ভারতেও য়ুহেমেরপন্থীর অভাব ছিল না ৷ দৃষ্টান্তস্বরূপ তাহারা বলিত আসলে অশ্বিদ্বয় দেবতাও নয়, নক্ষত্রও নয়, বিখ্যাত দুইজন রাজা ছিলেন, আমাদেরই মত রক্তমাংসের মানুষ, তবে যদি মৃত্যুর পরে দেবভাবাপন্ন হয় ৷ অপরের মতে সবই Solar myth, অর্থাৎ সূৰ্য্য চন্দ্র আকাশ তারা বৃষ্টি ইত্যাদি বাহ্য প্রকৃতির ক্রীড়াকে কবিকল্পিত নামরূপে সাজাইয়া মনুষ্যাকৃতি দেবতা করা হইয়াছে এবং এই মত আজকালকের য়ুরােপীয় পণ্ডিতের মনােনীত পথ পরিষ্কার করিয়া তুলিয়াছে ৷ বৃত্র মেঘ, বলও মেঘ, আর যত দস্যু দানব দৈত্য আকাশের মেঘ মাত্র, বৃষ্টির দেবতা ইন্দ্র এইসকল সূর্যকিরণের অবরােধকারী জলবর্ষণে বিমুখ কৃপণ জলধরকে বিদ্ধ করিয়া বৃষ্টিদানে পঞ্চনদের সপ্তনদীর অবাধ স্রোতঃসৃজনে ভূমিকে উর্বর, আৰ্য্যকে ধনী ও ঐশ্বৰ্য্যশালী করিয়া তােলেন ৷ অথবা ইন্দ্র মিত্র অৰ্য্যমা ভগ বরুণ বিষ্ণু সবাই সূৰ্য্যের নামরূপ মাত্র, মিত্র দিনের দেবতা, বরুণ রাত্রির, ঋভুগণ যাঁহারা মনের বলে ইন্দ্রের অশ্ব, অশ্বিদ্বয়ের রথ নির্মাণ করেন, তাঁহারাও আর কিছুই নন, সূর্যের কিরণ ৷ অপরদিকে অসংখ্য গোঁড়া বৈদিকও ছিল ৷ তাহারা কর্মকাণ্ডী, ritualist ৷তাহারা বলে দেবতা মনুষ্যাকৃতি দেবতাই বটে, প্রাকৃতিক শক্তির সর্বব্যাপী শক্তিধরও বটে, অগ্নি একসময়েই বিগ্রহবান দেবতা এবং বেদীর আগুন, পার্থিব অগ্নি, বাড়বানল ও বিদ্যুৎ এই তিন মূর্তিতে প্রকটিত, সরস্বতী নদীও বটে, দেবীও বটে ইত্যাদি ৷ ইহাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে দেবতারা স্তবস্তুতিতে সন্তুষ্ট হইয়া পরলােকে স্বর্গদান, ইহলােকে বল, পুত্র, গাভী, অশ্ব, অন্ন ও বস্ত্র দান করেন, শত্রুকে সংহার করেন, স্তোতার বেআদবী নিন্দুক সমালােচকের মাথা বজ্রাঘাতে চূর্ণ করেন ইত্যাদি শুভ মিত্রকাৰ্য্য সম্পন্ন করিতে সর্বদা ব্যস্ত হন ৷ প্রাচীন ভারতে এই মতই প্রবল ছিল ৷

তথাপি এমন চিন্তাশীল লােকের অভাব ছিল না যাঁহারা বেদের বেদত্বে, ঋষির প্রকৃত ঋষিত্বে আস্থাবান ছিলেন, ঋকসংহিতার আধ্যাত্মিক অর্থ বাহির করিতেন, বেদে বেদান্তের মূল তত্ত্ব খুঁজিতেন ৷ তাঁহাদের মতে ঋষিরা দেবতার নিকট যে জ্যোতির্দান প্রার্থনা করিতেন, সে ভৌতিক সূর্যের নয়, জ্ঞানসূৰ্য্যের, গায়ত্রীমন্ত্রোক্ত সূৰ্য্যের, বিশ্বামিত্র যাঁহাকে দর্শন করিয়াছিলেন ৷ এই জ্যোতি সেই “তৎ সবিতুর্বরেণ্যং দেবস্য ভর্গঃ”, এই দেবতা ইনি, “যাে নাে ধিয়ঃ প্রচোদয়াৎ,” যিনি আমাদের সকল চিন্তা সত্যতত্ত্বের দিকে প্রেরিত করেন ৷ ঋষিরা তমঃ ভয় করিতেন – রাত্রির নহে, কিন্তু অজ্ঞানের সেই ঘাের তিমির ৷ ইন্দ্র জীবাত্মা বা প্রাণ; বৃত্র মেঘও নয়, কবিকল্পিত অসুরও নয় – যাহা আমাদের পুরুষার্থকে ঘাের অজ্ঞানের অন্ধকারে আবৃত করিয়া রােধ করে, যাহার মধ্যে দেবগণ অগ্রে নিহিত ও লুপ্ত হইয়া বেদবাক্যজনিত উজ্জ্বল জ্ঞানালােকে নিস্তারিত ও প্রকট হন, তাহাই বৃত্র ৷ সায়ণাচাৰ্য ইহাদের “আত্মবিদ’ নামে অভিহিত করিয়া মাঝে মাঝে তাহাদের বেদব্যাখ্যার উল্লেখ করিয়াছেন ৷

এই আত্মবিস্কৃত ব্যাখ্যার দৃষ্টান্তস্বরূপ রহৃগণ পুত্র গােতম ঋষির মরুৎস্তোত্র [উল্লেখ]2 করা যায় ৷ সেই সূক্তে গােতম মরুঙ্গণকে আহ্বান করিয়া তাহাদের নিকট “জ্যোতি” ভিক্ষা করিয়াছেন –

যায়ং তৎ সত্যশবস আবিষ্কৰ্ত্ত মহিত্বনা ৷
    বিধ্যতা বিদ্যুতা রক্ষঃ ॥
গৃহতা গুহ্যং তমঃ বিযাত বিশ্বমত্রিণম্ ৷
    জ্যোতিষ্কৰ্ত্তা যদুশ্মসি ॥

কর্মকাণ্ডীদের মতে এই ঋকদ্বয়ের ব্যাখ্যায় জ্যোতিকে ভৌতিক সূৰ্য্যেরই জ্যোতি বুঝিতে হয় ৷ “যে রক্ষঃ সূর্যের আলােককে অন্ধকারে ঢাকিয়া ফেলিয়াছে, মরুদগণ সে রক্ষকে বিনাশ করিয়া সূৰ্য্যের জ্যোতি পুনঃ দৃষ্টিগােচর করুন ৷” আত্মবিদের মতে অন্যরূপ অর্থ করা উচিত, যেমন, “তােমরা সত্যের বলে বলী, তােমাদের মহিমায় সেই পরমতত্ত্ব প্রকাশিত হােক, তােমাদের বিদ্যৎসম আলােকে রক্ষকে বিদ্ধ কর ৷ হৃক্লপ গুহায় প্রতিষ্ঠিত অন্ধকার গােপন কর, অর্থাৎ সেই অন্ধকার যেন সত্যের আলােকবন্যায় নিমগ্ন, অদৃশ্য হইয়া যাক ৷ পুরুষার্থের সকল ভক্ষককে অপসারিত করিয়া আমরা যে জ্যোতি চাই, তাহা প্রকটিত কর ৷” এখানে মরুদগণ মেঘহন্তা বা বায়ু নহেন, পঞ্চপ্রাণ ৷ তমঃ হৃদয়গত ভাবরূপ অন্ধকার, পুরুষার্থের ভক্ষবসড়রিপুজ্যোতিঃ পরমতত্ত্ব সাক্ষারূপ জ্ঞানের আলােক ৷ এই ব্যাখ্যায় অধ্যাত্মতত্ত্ব, বেদান্তের মূলকথা, রাজযােগের প্রাণায়ামপ্রণালী একযােগে বেদে পাওয়া গেল ৷

এই গেল বেদে স্বদেশী বিভ্রাট ৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা কোমর বাঁধিয়া আসরে নামায় এই ক্ষেত্রে ঘােরতর বিদেশী বিভ্রাটও ঘটিয়াছে ৷ সেই বন্যার বিপুল তরঙ্গে আমরা আজ পর্যন্ত হাবুডুবু খাইয়া ভাসিতেছি ৷ পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা প্রাচীন নিরুক্তকার ও ঐতিহাসিকদের পুরােন ভিত্তির উপরেই নিজ চকচকে নব কল্পনামন্দির নির্মাণ করিয়াছেন ৷ তাহারা যাঙ্কের নিরুক্ত তত মানেন না, বর্লিন ও পেত্রগ্রাদে নবীন মনােনীত নিরুক্ত তৈয়ারি করিয়া তাহারই সাহায্যে বেদের ব্যাখ্যা করেন ৷ সেই প্রাচীন ভারতবর্ষীয় টীকাকারদের Solar mythএর বিচিত্র নবমূর্তি বানাইয়া, প্রাচীন রঙের উপর নূন্য রং ফলাইয়া এই দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের চক্ষে ধাঁধা লাগাইয়াছেন ৷ এই য়ুরােপীয় মতেও বেদোক্ত দেবতা বাহ্য প্রকৃতির নানা ক্রীড়ার রূপক মাত্র ৷ আৰ্য্যেরা সূৰ্য্য চন্দ্র তারা নক্ষত্র উষা রাত্রি বায়ু ঝটিকা খাল নদী সমুদ্র পর্বত বৃক্ষ ইত্যাদি দৃশ্যবস্তুর পূজা করিতেন ৷ এই সকলকে দেখিয়া বিস্ময়ে অভিভূত বব্বর জাতি এইগুলির বিচিত্র গতিকে কবির রূপকচ্ছলে স্তব করিত ৷ আবার তাহারই মধ্যে নানান দেবতার চৈতন্যময় ক্রিয়া বুঝিয়া সেই শক্তিধরের সঙ্গে সখ্য স্থাপন ও তাহাদের নিকট যুদ্ধে বিজয়লাভ ধনদৌলত দীর্ঘজীবন আরােগ্য ও সন্ততি কামনা করিতেন, রাত্রির অন্ধকারে বড় ভীত হইয়া যাগযজ্ঞে সূৰ্য্যের পুনরুদ্ধার করিতেন ৷ ভূতেরও আতঙ্ক ছিল, ভূত তাড়াইবার জন্যে দেবতার নিকটে কাতরােক্তি করিতেন ৷ যজ্ঞে স্বর্গলাভের আশা ও প্রবল [ইচ্ছা]3 ইত্যাদি ইত্যাদি প্রাগৈতিহাসিক বব্বরের উচিত ধারণা ও কুসংস্কার ৷

যুদ্ধে বিজয়লাভ, যুদ্ধ কাহার সঙ্গে? ইহারা বলেন, পঞ্চনদনিবাসী আৰ্যজাতির সমর আসল ভারতবাসী দ্রাবিড়জাতির সঙ্গে, আর প্রতিবেশীদের মধ্যে যে যুদ্ধবিগ্রহ সতত ঘটিয়া আসে, সেই আৰ্যতে আৰ্য্যতে ভিতরের কলহ ৷ যেমন প্রাচীন ঐতিহাসিক বেদের স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র ঋক বা সূক্তকে আধার করিয়া নানান ইতিহাস গঠন করিত্নে, ইহাদেরও ঠিক সেই প্রণালী ৷ তবে সেইরূপ বিচিত্র অতিপ্রাকৃতঘটনায় ভরা বিচিত্র গল্প না বানাইয়া জান বৃশ ঋষির সারথ্যে ব্রাহ্মণকুমারের রথচক্রে নিষ্পেষণ, মন্ত্রপ্রয়ােগে পুনর্জীবন দান, পিশাচীকৃত অগ্নিতেজের হরণ ইত্যাদি ইত্যাদি অদ্ভুত কল্পনা না করিয়া আৰ্য্য ত্রিৎসুরাজ সুদাসের সঙ্গে মিশ্রজাতীয় দশজন রাজার যুদ্ধ, একদিকে বশিষ্ঠ অপরদিকে বিশ্বামিত্রের পৌরােহিত্য, পৰ্বতগুহানিবাসী দ্রাবিড় জাতি দ্বারা আর্যদের গাভী হরণ ও নদীর স্রোত বন্ধন, দেবশুনী সরমার উপমা-ছলে দ্রাবিড়দের নিকট আৰ্য্যদৌত্য বা রাজদূতীপ্রেরণ, প্রভৃতি সত্য বা মিথ্যা সম্ভব ঘটনা লইয়া প্রাচীন ভারতের ইতিহাস লিখিতে চেষ্টা করেন ৷ এই প্রাকৃতিক ক্রীড়ার পরস্পর-বিরােধী রূপকের আর তাহার সঙ্গে এই ইতিহাসসম্বন্ধী রূপকের মিল করিতে গিয়া পাশ্চাত্য পণ্ডিতমণ্ডলী বেদের যে অপূৰ্ব্ব গােল করিয়া ফেলিয়াছেন, তাহা বর্ণনাতীত ৷ তবে তাঁহারা বলেন না কি, আমরা কি করিব, প্রাচীন বর্বর কবিদের মন গােলমেলে ছিল, সেই জন্যই এইরূপ গোঁজামিল করিতে হইয়াছে, আমাদের ব্যাখ্যা কিন্তু ঠিক, খাঁটি, নির্ভুল ৷ সে যাহাই হৌক, ফলে প্রাচ্য পণ্ডিতদের ব্যাখ্যায় বেদের অর্থ যেমন অসংলগ্ন গােলমেলে দুরূহ ও জটিল হইয়াছিল, পাশ্চাত্যদের ব্যাখ্যায় সেইরূপেই হইয়াছে ৷ সবই বদলাইয়াছে, অথচ সবই সমান ৷ টেমস, সেন ও নেবা নদীর শত শত বজ্রধর আমাদের মস্তকের উপর নব পাণ্ডিত্যের স্বর্গীয় সপ্তনদী বর্ষণ করিয়াছেন সত্য, তাহাদের কেহও বৃত্ৰকৃত অন্ধকার সরাইতে পারেন নাই ৷ আমরা যেই তিমিরে, সেই তিমিরে ৷









Let us co-create the website.

Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.

Image Description
Connect for updates